আল-হিজর অতিক্রমকালে মহানবী (ﷺ)-এর নির্দেশ

আল-হিজর অতিক্রমকালে মহানবী (ﷺ)-এর নির্দেশ

নবম হিজরী সালে তাবূকের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সময় মুসলমান বাহিনী দুটো কুয়ো অতিক্রম করেন, যেগুলো ইতিপূর্বে সামূদ গোত্রের মালিকানাধীন ছিল। এই স্থানটি সম্পর্কে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেছিলেন যে পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর জাতি এখানেই একটি মাদী উটকে হত্যা করেছিল, যার ফলে আল্লাহতা’লা তাদেরকে শাস্তি দেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দকে দুটো কুয়োর মধ্যে শুধু একটি হতে পানি সংগ্রহের অনুমতি দেন, যাতে তাঁদের চাহিদা মেটে; অপর কুয়োটি হতে পানি সংগ্রহ করতে তিনি তাঁদের বারণ করেন।

যে কুয়োটি হতে মহানবী (ﷺ) তাঁর পুণ্যাত্মা সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দকে পানি সংগ্রহের নির্দেশ দেন, সেটা থেকেই ওই উটনী ইতিপূর্বে জলপান করতো। তার জন্যে পানি পানের দিন (আলাদাভাবে) বরাদ্দ থাকলেও সামূদ গোত্রের লোকেরা এটা বরদাশত্ করতে অক্ষম হয়ে উটনীকে পেশীতন্তু কেটে হত্যা করে।

(পয়গম্বর সালেহ আলাইহিস্ সালামের) ওই উটনীকে হত্যার এ ঘটনাটি ঘটেছিল বহু শতাব্দী আগে, আর নিঃসন্দেহে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও সাহাবাবৃন্দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুমের সময়কাল নাগাদ সেই কুয়োটিরও পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল; কিন্তু এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। এই কুয়োটি পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর উটনীর সাথে সম্পর্কিত ছিল, আর এর আশীর্বাদসূত্রে প্রিয়নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবাবৃন্দ (رضي الله عنه)-কে এটা থেকে পানি সংগ্রহ করতে বলেন। পক্ষান্তরে, সামূদ গোত্রের লোকেরা অপর যে কুয়োটির পানি ব্যবহার করতো, মহানবী (ﷺ) নিজ সাহাবামণ্ডলী (رضي الله عنه)-কে সেটার পানি ব্যবহার করতে বারণ করেন। কেননা, সামূদ গোত্র এরই সূত্রে আল্লাহর শাস্তির সতর্ক-বার্তা শুনতে পেয়েছিল। তাদের ওই বিশ্বাসঘাতকতার (উটনীকে হত্যা) দরুন আল্লাহ পাক তাদেরকে শাস্তি দেন এবং ফলশ্রুতিতে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ বিষয়টি স্মরণে রেখেই হুযূর পূর নূর (ﷺ) সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-কে ওই কুয়োর পানি ব্যবহার করতে মানা করেন।

এই নিষেধাজ্ঞা জারির আগে পুণ্যবান সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দের একটি দল নিজেদের অজ্ঞাতসারে ‘সামূদ’গোত্রের ওই কুয়ো থেকে পানি ব্যবহার করেছিলেন। এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে শোনার পর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আরয করেন এই মর্মে যে তাঁরা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে না জেনেই ইতোমধ্যে ওই পানি ব্যবহার করেছেন। প্রিয়নবী (ﷺ) তাঁদেরকে ওই পানি এবং তা দ্বারা রান্নাকৃত সমস্ত খাবার ফেলে দিয়ে উটনীর সাথে সম্পর্কিত কুয়ো হতে সংগৃহীত পানি ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন।

এই ঘটনা সম্পর্কে আরো বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় নিম্নের আহাদীসগুলোতে: 

২.৪.১ আল-হিজরে অবস্থিত সামুদের কুয়ো হতে পানি পানে নিষেধাজ্ঞা

হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তাবূক জ্বিহাদের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল-হিজরএলাকায় যাত্রাবিরতি করেন এবং তাঁর সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দকে সেখানকার কুয়ো হতে পানি পান বা সংগ্রহ করতে মানা করেন। (কতিপয় সাহাবী) আরয করেন, ‘আমরা তা দিয়ে আটার কাই বানিয়েছি এবং (জন্তুর চামড়ানির্মিত) আমাদের পানির থলেগুলো-ও পূর্ণ করেছি।’ মহানবী (ﷺ) তাঁদেরকে আটার কাই ছুঁড়ে ফেলতে বলেন এবং কুয়োর পানিও ঢেলে ফেলে দিতে আদেশ করেন। [আল-বুখারী প্রণীত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব আল-আম্বিয়া’, ‘আল্লাহর বাণী: আর সামূদের প্রতি তাদের ভাই সালেহ’ শীর্ষক অধ্যায়, ৩:১২৩৬-১২৩৭ #৩১৯৮; আল-ক্বুরতুবী কৃত ‘আল-জামে’ লি-আহকা’মিল ক্বুরআন’, ১০:৪৬; আল-বাগ্বভী রচিত ‘মু’আলিমুত্ তানযীল’, ২:১৭৮; ইবনে হাযম লিখিত ‘আল-মুহাল্লা’, ১:২২০; এবং আল-আসক্বালানী প্রণীত ‘তাগলীক্ব আল-তা’লীক্ব’, ৪:১৯]।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন