আল-কুরআনের প্রদর্শিত হেদায়াত হিসেবে ‘যিকরের’ তাৎপর্য

আল-কুরআনের প্রদর্শিত হেদায়াত হিসেবে ‘যিকরের’ তাৎপর্য

মানবজাতির প্রতি দানকৃত আল-কুরআনের হোদায়াত (পথপ্রদর্শন)-এর ভিত্তিস্তম্ভ ‘স্মরণ’ করার (ঐশী) আজ্ঞার ওপরই ভিত্তিশীল। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহতা’লা ও তাঁর সর্বশেষ নবী (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান রাখেন, তাঁকে সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লার অবতীর্ণ পূর্ববর্তী ও বর্তমান হেদায়াতগুলোতে একযোগে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছে:

“এবং তারাই, যারা ঈমান আনে সেটার ওপর, যা, হে মাহবূব, আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, আর পরলোকের প্রতি (যারা) বিশ্বাস রাখে।” [আল-ক্বুরআন, ২:৪] 

এখানে ‘স্মরণের’ ভিত্তিতে পূর্ববর্তী ধর্মীয় শাস্ত্রলিপিগুলোর স্বীকৃতিকে এবং তৎপরবর্তী পর্যায়ে ওই স্মৃতি নিজের সারা জীবনে সংরক্ষণ করাকে ঈমানের পূর্ণতা লাভের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কেউ যখন কোনো কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্য করে, সে তখন তা করে তারই (মস্তিষ্কে) জমানো তথ্য অনুসারে। ভালোবাসা, ভয়, বিনয় ও সমর্পণের মতো আবেগ আমাদেরই সংরক্ষিত স্মৃতির দ্বারা আকার-আকৃতি পায়। যদিও এগুলো অন্তরের সাথে জড়িত ভাবানুভূতি, তবুও সংঘটিত মানসিক প্রক্রিয়াগুলো না হলে এগুলোর অস্তিত্ব কোনোভাবেই থাকতো না। অতএব, স্মৃতিশক্তি হচ্ছে আল্লাহতা’লার তরফ থেকে এক বড় নেয়ামত তথা আশীর্বাদ।

(মক্কার) মুশরিকদেরকে প্রকৃত বিশ্বাসের প্রতি আমন্ত্রণ জানানো হলে তারা আপন বৈশিষ্ট্যগত উত্তর দিতো, “আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মকে আঁকড়ে ধরতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।” আরেক কথায়, তারা নিজেদের শেকড় কেটে ফেলতে অনিচ্ছুক ছিল। নিম্নবর্ণিত আয়াতে এই ধরনের অবিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে তাদের পূর্বপুরুষরা ভুল পথ বেছে নেয়ার কারণেই লয়প্রাপ্ত হয়েছিল এবং তাই তাদের পূর্ববর্তীদেরকে যে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল, সেই সত্যের দাওয়াত তাদের কবূল করা উচিত। তবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফলশ্রুতিতে নিজেরাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কুরআন মজীদ এ বিষয়ে ঘোষণা করে:

“অতঃপর আমি (খোদা) তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গিদেরকে স্বীয় এক মহা দয়াস্বরূপ উদ্ধার করেছি এবং যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করতো তাদেরকে নির্মূল করেছি। আর তারা (কখনো) ঈমান গ্রহণকারী হবার ছিল না।” [আল-ক্বুরআন, ৭:৭২]  

এই আয়াতে করীমায় (মক্কার) অবিশ্বাসীদেরকে ‘স্মরণ করিয়ে’ দেয়া হয়েছে যে তাদের পূর্বপুরুষরা ভুল পথ বেছে নিয়েছিল এবং ফলশ্রুতিতে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। অতএব, অবিশ্বাসীরা যেন অবতীর্ণ এই হেদায়াতকে গুরুত্বসহ গ্রহণ করে এবং পূর্ববর্তীদের মতো একই ভুল না করে বসে। অনুরূপভাবে, মুসলমানবৃন্দ-ও পূর্ববর্তী নবী-রাসূল (عليه السلام)-মণ্ডলীর প্রতি অবতীর্ণ ঐশী বাণীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য রয়েছেন, যেহেতু সেসব ওহী আল-কুরআনেরই অনুরূপ বার্তা বহন করেছিল। তাই কুরআন মজীদকে সত্য বলে স্বীকার করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পূর্ববর্তী ওহীগুলোকে স্বীকার করাও তদনুরূপ।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন