বালাকোট আন্দোলনের হাকীকত (অনুবাদ ও টীকা সুন্নী ফাউন্ডেশন) ৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- বালাকোট যুদ্ধ (৬ মে ১৮৩১ খ্রি.) পটভূমিকা
‘পেশোয়ার থেকে কাশ্মীরের পথে বালাকোট একটি সুরক্ষিত এলাকা। চতুর্দিকে উঁচু পাহাড় দ্বারা বালাকোটবেষ্টিত। সুতরাং এটি একটি সুদৃঢ় দুর্গের ন্যায় ছিল। সীমান্ত এলাকায় ৫ বছর অবস্থান ও রাজত্বকালে সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেব, ইসমাইল দেহলভী, মুজাহিদবাহিনীর কাজী ও কর্মচারীরা পাঠানদের কিছু কুমারী ও বিধবা মহিলাকে জোর করে বিবাহ করেছিল। এ নিয়ে ভারতীয় ও পাঠানদের মধ্যে বিরাট দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সৈয়দ আহমদ সাহেব একটি পাঠান বালিকাকে জোর করে বিবাহ করেন। তার গর্ভে এক কন্যা সন্তান হয়। এই বিয়ে নিয়ে সৈয়দ সাহেবের সাথে আফগান উপজাতীয়দের মন কষাকষি চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্ব শেষপর্যন্ত সৈয়দবাহিনীর পরাজয় তরান্বিত করে। ফুলুড়ার যুদ্ধে সৈয়দবাহিনী চরমভাবে পর্যূদস্ত হয় এবং তার অসংখ্য ওহাবী সৈন্য নিহত হয়।
বিভিন্ন যুদ্ধে আফগান সীমান্তবাসীদের হাতে মার খেতে খেতে মুজাহিদবাহিনী কিছু নিহত হয় আর কিছু দল ত্যাগ করে মৌলভী মাহবুব আলীর নেতৃত্বে হিন্দুস্থানের দিকে পলায়ন করে। শেষ পর্যন্ত একলাখের মধ্যে হাজার বারোশ মুজাহিদ সৈয়দ সাহেবের সাথে থেকে যায়। এ অবস্থা দেখে সৈয়দ সাহেব ঐ এলাকা ত্যাগ করে কাশ্মীরে আশ্রয় নেওয়ার উদ্দেশ্যে পলায়ন করেন। সামনে শিখ সর্দার শের সিং এর বিশহাজার সৈন্যবাহিনী এবং পিছনে পাঠান আফগান সীমান্তবাসীর ধাওয়ার মধ্যখানে বালাকোট চুড়ান্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েও পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়।’ (দেখুন- ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী লিখিত ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তক ‘শাহ ওলী উল্লাহ ও তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা পৃ. ৭৮-৮৬ অনুবাদক)
উপরোক্ত তথ্যাবলির দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, মৌলভী ইসমাইল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবদ্বয় বিধর্মী শিখদের হাতে নয় বরং সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী মুসলমান ধার্মিকদের হাতেই নিহত হয়েছিল।
তার কারণ ১. ইসমাইল দেহলভী ও তার পীর সৈয়দ আহমদ বেরলভী ‘সিরাতে মুস্তাকিম ও ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ গং কিতাবসমূহের বাতিল আক্বিদাকে ইসলামী আক্বিদার নামে প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে ‘তরীকায়ে মোহাম্মদীয়া’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করে, যে আন্দোলন গড়ে তুলে ছিলেন এবং সাথে সাথে সরলপ্রাণ মুমলমানগণকে ধোকা দেওয়ার মানসে শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলেন।
এতে বাহ্যিক অবস্থা দেখে যদিও অনেক সরলপ্রাণ মুসলমান প্রতারিত হয়েছেন এবং মুসলমানদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এমতাবস্থায়ও তাদের (ওহাবীদের) এ বাতিল মতবাদ প্রচার করতে গিয়ে তারা স্থানে স্থানে নবীপ্রেমিক সুন্নি মুসলমানদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
(এমনকি পেশওয়ারের একদল হক্বানী রব্বানী সাহসী বিজ্ঞ আলেম সমাজ) থেকে একটি কাগজের উপর স্বাক্ষর যুক্ত ফতওয়া গ্রহণ করে যে, সৈয়দ সাহেব এবং সঙ্গী সাথী মুজাহিদ (ওহাবী) বাহিনীর আক্বিদা বা ধর্মবিশ্বাস ভ্রান্ত।’ (আবুল হাসান আলী নদভীর, ঈমান যখন জাগল’ ৩৯)
ইসলামী আক্বিদাভিত্তিক এ সঠিক ফতওয়া প্রচার হওয়ার পর দুশমনে রাসূল সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও তার খলিফা ইসমাইল দেহলভীর অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে গেল। মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বিদার সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হলেন।
প্রকাশ থাকে যে, ‘ঈমান যখন জাগল’ এ পুস্তকের লিখক সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী যেহেতু নজদী ওহাবী আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলেন, এজন্য তিনি তার পুস্তকে হক্বানী উলামায়ে কেরামগণকে উলামায়ে সু’ বলে আখ্যায়িত করে সরলপ্রাণ সুন্নী মুসলমানগণকে প্রতারণা করেছিলেন।
তার কারণ ২. সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও ইসমাঈল দেহলভী যেহেতু পাঠান মহিলাদেরকে জোরপুর্বক বিবাহ করতে শুরু করলেন, তখনই পাঠান সুন্নী মুসলমান তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য হলেন। তদুপরি শিখজাতী তাদের স্বাধীনদেশ রক্ষণাবেক্ষণ করতে লিপ্ত ছিলেন। এমতাবস্থায় সৈয়দ আহমদ বেরলভী গং তাদের (শিখদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করাই ইংরেজদের পক্ষে কাজ করার নামান্তর মাত্র।
অনুরূপ ‘তারিখে হাজারা’ নামক ইতিহাস গ্রন্থেও ৫১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে, পাঠান মুসলমানদের মধ্যে নিয়ম ছিল যে, তার নিজেদের মেয়েদেরকে দেরিতে বিয়ে দিত। ইসমাইল দেহলভী এ প্রথা রহিতকরণের উদ্দেশ্যে কোন মুরিদের মেয়ে অবিবাহিত থাকলে সে তার বাহিনীর সঙ্গে থাকতে পারবে না। এই নির্দেশ জারি হওয়ার পর পাঠান খান্দানের ২০টি অবিবাহিত মেয়েকে পাঞ্জাবীবাহিনীর ২০ জনের সঙ্গে বিবাহ পড়িয়ে দেন এবং দুটি মেয়েকে স্বয়ং ইসমাইল দেহলভী সাহেব বিবাহ করেন।
তখন ইউসুফ জর্গাজয়ী এই বিবাহ রীতিনীতি দেখে বললেন, আমরা আপনার এই বিধান মানি না। আমারা আমাদের মেয়েগুলোকে ফেরত পেতে চাই। কিন্তু ইসমাঈল দেহলভী তাদের মেয়েগুলোকে ফেরত দিতে অস্বীকার করলে পাঠান ও পাঞ্জাবীদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। প্রথমদিন উভয়ের মধ্যে যুদ্ধের কোন ফলাফল হয় নাই। পরদিন ইউসুফ জর্গাজয়ী ইসমাঈল দেহলভীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ইসমাঈল দেহলভী নিহত হয়, তার মৃত্যু দেখে পাঞ্জাবীগণ তার বাহিনী ত্যাগ করে চলে যায়। এ যুদ্ধেই সৈয়দ আহমদ বেরলভী মৃত্যুবরণ করেন। (আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত ও নজদী পরিচয় দ্র:)
এ সম্পর্কে বিস্তরিত জানতে হলে কলম সম্রাট আল্লামা আরশাদুল কাদেরী (আলাইহির রহমত) এর লিখিত জের ও জবর, যালযালা প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠ করতে অনুরোধ রইল।
_______________
ইজহারে হক্ব
লেখক : অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা:জি:আ:)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন