বাতিলপন্থীদের আরও কিছু আকিদা

 

বাতিলপন্থীদের আরও কিছু আকিদাঃ


বর্তমান জামানার বাতিলপন্থদের মধ্যে তাবলীগ জামাতও একটি। উপরােক্ত আলােচনার মাধ্যমে তাদের আকিদা/ মতবাদ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাদির সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ-


১। রাসূল (ﷺ) যে পরিমাণ ইলমে গায়েব জানেন, সে পরিমাণ ইলমে গায়েব সমস্ত শিশু, পাগল, ৯. জীব-জানােয়ার ও চতুষ্পদ জন্তুও (ভেড়া, বকরি, গরু, ছাগল। প্রভৃতি) জানে। (নাউযুবিল্লাহ)


২। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) শুধু একাই রাহমাতুল্লিল আলামিন নন। আরাে অনেকে রাহমাতুল্লিল আলামিন হতে পারেন।


৩। কোন সাহাবী (رضي الله عنه) কে কেউ কাফের বললে সে ইসলামের সঠিক দলেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


৪। ওরশ ও মিলাদ মাহফিলে শরীয়ত পরিপন্থী কোন কাজ না হলেও উহা নিষিদ্ধ ও হারাম।


৫। কিয়াম করা ব্যতিত শুধু মিলাদ শরীফ পড়াও না-জায়েজ।


৬। প্রচলিত ফাতেহা শরীফ পাঠ করা বিদআত ও হিন্দুদের পূজার মত।


৭। দূর থেকে কোন মাজার শরীফ যিয়ারতে যাওয়া এমনকি ওরশ শরীফের দিন কোন অলীর মাজার যিয়ারত করতে যাওয়া হারাম। মহররম মাসে হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)।


৮। এর। শাহাদাতের আলােচনা-মাহফিল করা এবং এ উপলক্ষে শরবত, দুধ ও নেওয়াজ ইত্যাদি বিতরণ করা সব হারাম ও না-জায়েয।


৯। মিলাদ শরীফের নেওয়াজ, তবাররুক ইত্যাদি ভক্ষণ করা হারাম। উহা ভক্ষণ করলে অন্তরের নূর পর্যন্ত বের হয়ে যায়।


১০। হিন্দুদের হােলী, দেওয়ালী ইত্যাদি পূজা উৎসবের প্রসাদ খাওয়া বৈধ।


১১। কারবালার শহীদগণের স্মরণে প্রকাশিত মার্সিয়া (শােক গাঁথা) আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া বা মাটিতে পুঁতে রাখা আবশ্যক।


১২। দুই ঈদের দিন কোলাকুলি করা বিদআত বা নিকৃষ্ট কাজ।


১৩। রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব নেই। তাই"ইয়া রাসুলাল্লাহ"বলাও না-জায়েয।


১৪। আল্লাহ তাআলা মিথ্যা কথা বলাসহ অন্যান্য মন্দ বা খারাপ কাজ সম্পাদন করতেও সক্ষম। (নাউযুবিল্লাহ)


১৫। রাসূল (ﷺ) দেওবন্দী আলেমদের সংস্পর্শে এসে উর্দু শিখেছেন।


১৬। শয়তান ও মালাকুল মউত বা আযরাইল (আঃ) এর ব্যাপক জ্ঞানের বিষয় দলীল প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত, কিন্তু রাসূল। (ﷺ)-এর এমন ব্যাপক জ্ঞানের ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণ নেই।


১৭। যত বড় নবী, অলী বা ফেরেশতা হােক না কেন আল্লাহর নিকট তারা চামার থেকেও নিকৃষ্ট।


১৮। রাসূল (ﷺ)-এর শরীয়তের ব্যাপারে কথা বলার কোন অধিকার নেই। রাসূল (ﷺ)-এর চাওয়ায় কিছু হয় না।


১৯। বান্দার সাথে আল্লাহ পাক দুনিয়াতে, কবরে ও পরকালে কি ব্যবহার করবেন তা কেউ জানে না। এমনকি কোন নবী বা অলীও তাদের নিজেদের সাথে বা অপরের সাথে কি ব্যবহার করা হবে তা জানেন না।


২০। নামাজের মধ্যে রাসূল (ﷺ)-এর খেয়াল করা নিজের গরু-গাধার প্রতি খেয়াল করা হতেও অনেক নিকৃষ্টতর।


২১। আমলের দিক দিয়ে উম্মতগণ অনেকসময় নবীদের সমান, এমনকি নবীদের থেকেও বড় হয়ে যায়।


২২। খাতামুন্নবী অর্থ' শেষ নবী' বলা মূর্খদের ধারণা।


২৩। রাসূল (ﷺ)-এর পরে যদি কোন নতুন নবী পয়দা হয় তাহলেও রাসূল (ﷺ) খাতামুন্নবী হওয়ার ব্যাপারে ক্রটি হবে না।


২৪। আল্লাহ তাআলা কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ঐ বিষয়ে অবগত নন।


২৫। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আমিও একদিন মৃত্যুবরণ করে মাটির সাথে মিশে যাব। (নাউযুবিল্লাহ)


২৬। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী খুব ভাল লােক ছিলেন, হাদীস অনুযায়ী আমল করতেন, বিভিন্ন বিদআতী ও শিরক কাজ বন্ধ করতেন। লােকেরা তাকে ওহাবী বলে, তার আক্বিদা খুব ভাল ছিল। (ফতােয়ায়ে রশীদিয়া)


২৭। যারা তাবলীগ জামাত করে এবং তাবলীগ জামাতীদের সাহায্য করে একমাত্র তারাই মুসলমান। এছাড়া কোন মুসলমান নেই।


২৮। ১২ ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বৈধ নয়। তার বৈধতার পক্ষে কুরআন-হাদীসের কোথাও দলিল নেই।


২৯। বর্তমান তাবলীগী অনুসারীরা কোন পীরের হাতে বয়াত হয়। পীরের হাতে বয়াত হওয়াকে বেদআতী কাজ মনে করে।


৩০। রাসূল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব ছিল, বিশ্বাস করা স্পষ্ট শিরক।


৩১। রাসূল (ﷺ)-কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা শিরক।


৩২। রাসূল (ﷺ) মাটির তৈরি মানুষ ছিলেন, নূরের তৈরি নয়।


৩৩। শরীয়তের দৃষ্টিতে যা বিদআত বলে প্রামণিত তার কোন প্রকার নেই। সকল বিদআতই না জায়েয ও গােমরাহী। কেউ কেউ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অনেক না-জায়েয কাজকে জায়েযের ভূষণ পরিধানের জন্য বিদআতকে হাসান ও সায়্যেআ বলে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে। (বিভ্রান্তির অবসান, পৃ: ১১০)


৩৪। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত কবিরা গুনাহ। বিদআতী ব্যক্তি কবিরা গুনাহকারীদের অন্তর্ভূক্ত। (প্রাগুক্তঃ ১০৯)



মন্তব্যঃ


অথচ ইসলামী সঠিক আকিদা হল সল। বিদআতই হারাম বা না-জায়েয নয়। বিদআত প্রথমত দুই প্রকার। বিদআতে হাসানা বা উত্তম বিদআত ও বিদআতে সাইয়্যেআ বা নিকৃষ্ট বিদআত। বিদআতে হাসানা আবার তিন প্রকার। ওয়াজিব বিদআত, মুস্তাহাব বিদআত ও মুবাহ বিদআত। বিদাআতে সায়্যেআ আবার দুই প্রকার। হারাম। বিদআত ও মাকরূহ বিদআত। অতএব বিদআত সর্বমােট পাঁচ প্রকার। এই পাঁচ প্রকারের মধ্যে একমাত্র হারাম বিদআতই হল নাজায়েয বা কবিরা গুনাহ। (মিরকাত ১ ম খন্ড, পৃ: ২১৬, আঈনী শরহে বুখারী, আশীয়াতুল লােমাত শরহে মেশকাত, ফতুয়ায়ে শামী ২ য় খন্ড, পৃ: ২৯৯)



৩৫। নিম্নে বর্ণিত আমলগুলাে তাদের দৃষ্টিতে বিদআত বা হারাম তথা কবিরা গুনাহঃ-


(ক) ওরশ করা।


(খ) জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী করা।


(গ) মৃতের কুলখানী করা।


(ঘ) মৃতের চেহলাম বা চল্লিশা করা।


(ঙ) কবরের উপর চাদর বা ফুল দেয়া


(চ) কবরের উপর গম্বুজ বানানাে।


(ছ) জানাযার নামাজে হাত তুলে দোয়া করা।


(জ) জানাযার নামাজের পর জোর আওয়াজে কালিমা পড়তে পড়তে জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া।


(ঝ) ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে মুসাফাহ মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা।


(ঞ) আযানের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করা।


(ট) আযান ইকামতের সময় রাসূল (ﷺ)-এর নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলি চুমু দিয়ে চোখে লাগানাে।


(ঠ) প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান।


(ড) মিলাদ অনুষ্ঠানে কিয়াম করা।



(নারায়ণগঞ্জের দেওবন্দী অনুসারী আলেমদের সংগঠন, নারায়নগঞ্জ উলামা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ"বিভ্রান্তির অবসান", পৃ: ১১০)



উপরােক্ত মতবাদ সমূহের সব কটি তাবলীগ জামাতের জন্য প্রযােজ্য না হলেও, অনেক গুলির সাথে তাদের বিশ্বাস ও কার্যকলাপের হুবহু মিল রয়েছে। অথচ এ সকল মতবাদ হলাে কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত আমল আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখানে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীও তাদের আমল-আক্বিদা দেওবন্দীদের (কওমী-হেফাজতী) মুরুব্বী ও তাদের আমল-আকিদা প্রায় এক ও অভিন্ন। দেওবন্দীদের এসব আমল আক্বিদাকেই তাবলীগ জামাত তাদের ০৬ উসূলের মাধ্যমে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর। তাই এগুলাে মুল্যায়ণ পূর্বক আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা ও সঠিক পথ বেছে নেয়া উচিত।

__________________

কিতাবঃ ইসলামী তাবলিগ বনাম বর্তমান তাবলিগ

সংকলকঃ  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন