নামায আরম্ভ করার সময় উভয় হাত উত্তোলন প্রসঙ্গে

২৮ - بَابُ مَا جَاءَ فِي رَفْعِ الْيَدَيْنِ عِنْدَ اِفْتِتَاحِ الصَّلَاةِ
৯৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ  كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّىٰ يُحَاذِيَ بِهِمَا شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ وَائِلٍ، أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي الصَّلَاةِ حَتَّىٰ يُحَاذِيَ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ.

বাব নং ৪৩. ২৮. নামায আরম্ভ করার সময় উভয় হাত উত্তোলন প্রসঙ্গে

৯৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আসেম থেকে তিনি তার পিতা থেকে তিনি ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  (নামায আরম্ভ করার সময়) তাঁর উভয় হাত এতখানি উপরে উঠাতেন যে, তা কানের লতি বরাবর হয়ে যেতো।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, হযরত ওয়ায়েল (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)  কে নামাযের (প্রারম্ভে) হাত উঠাতে দেখেছেন, তখন ঐ হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠে যেত। (তাবরানী, আল মু’জামুল কবীর, ১৯/২৮৫/৩৬০)
ব্যাখ্যা: রাসূল (ﷺ)  কিভাবে নামায শুরু করতেন উপরে বর্ণিত হাদিসে তা আলোচনা করা হয়েছে। তা হলো- তিনি তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। কখনো এতখানি হাত উঠাতেন যে, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী কান বরাবর উঠে যেত।
নামাযের প্রারম্ভে হাত কাঁধ বরাবর উঠানো উত্তম, না কানের লতি পর্যন্ত উঠানো উত্তম এ বিষয়ে হানাফী ও শাফেঈ মাযহাহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। হানাফী মাযহাবে কানের লতি পর্যন্ত উঠানো উত্তম। তাঁরা উপরে বর্ণিত হাদিসসহ একই বিষয়ে যেসব সহীহ রেওয়ায়েত রয়েছে, তা দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। শাফেঈ মাযহাবে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো উত্তম। তাঁরা দলীল হিসেবে আবু হোমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস অথবা ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস পেশ করে থাকেন।

মূলত:- উভয় মাযহাবের মতের উপর সহীহ হাদিস বিদ্যমান রয়েছে এবং এ হাদিস সমূহের মধ্যে সমন্বয় করা খুবই সহজ। যেমন একদা ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) মিসর গমন করেন। সেখানে লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, এ সমস্ত হাদিসের মধ্যে কি সমন্বয় করার কোন সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, হাতের তালু কাঁধের সামনে থাকবে, আর বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের লতি বরাবর এবং অঙ্গুলি সমূহের শেষাংশ কানের উপর অংশের বরাবর থাকবে। অবশ্য হানাফী মাযহাবও এ সমন্বয় সমর্থন করেছে। হানাফী মাযহাবের ফাতহুল কাদীরের লেখক এটাই গ্রহণ করেছেন। উপরোক্ত হাদিস সমূহের মধ্যে এভাবেও সমন্বয় করা যায় যে, রাসূল (ﷺ)  কোন বিশেষ নির্ধারিত নিয়ম ব্যতীত কখনো কাঁধ পর্যন্ত, কখনো কানের লতি পর্যন্ত এবং কখনো কানের উপর মাথা বরাবর পর্যন্ত হাত উঠাতেন।

৯৫ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ عَبْدِ الْـجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيْهِ ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ التَّكْبِيْرِ، وَيُسَلِّمُ عَنْ يَمِيْنِهِ وَيَسَارِهِ.

৯৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আসেম থেকে, তিনি আব্দুল জাব্বার ইবনে ওয়ায়েল ইবনে হুজর থেকে, তিনি তার পিতা ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)  কে (প্রথম) তাকবীরের সময় হাত উঠাতে দেখেছি এবং তিনি (নামায শেষে) ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরাতেন।

ব্যাখ্যা: এ হাদিসের মধ্যে প্রথমত: দু’টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল হাত উঠানো এবং সাথে সাথে আল্লাহু আকবর বলে তাকবীর বলা, অথবা একটার পর একটা বলা। অতঃপর এর মধ্যে অন্য একটি বিষয় হলো- প্রথমে হাত উঠাবে, পরে তাকবীর বলবে, নাকি প্রথমে তাকবীর বলে পরে হাত উঠাতে হবে?

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- নামায শেষে দু’টি সালাম দিতে হবে না একটি? উপরে বর্ণিত প্রথম বিষয়ে তথা হাত উঠানো ও তাকবীর বলা সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফিকাহবিদ যেমন- তাহাভী, কাযীখান ও ইমাম আবু ইউসূফ (رحمة الله) প্রথম পদ্ধতিটি গ্রহণ করেছেন। এ মতের সমর্থনে হযরত ওয়ায়েল (رضي الله عنه), হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه), হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه), হযরত আলী (رضي الله عنه) এবং হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه)’র বর্ণিত হাদিস রয়েছে। এর মধ্যে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ)  যখন তাকবীর বলতেন, তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এখানে তাকবীর বলা ও হাত উঠানোর সময়ের সূ² মিলনের কারণে একটি অপরটির শর্তবিশেষ। তাছাড়া উক্তদল আরো একটি দলীল পেশ করে বলেন যে, হাত উঠানো তাকবীরের সুন্নত। সুতরাং এর সাথেই তা আদায় করতে হবে।

ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে প্রথমে হাত উঠাতে হবে এরপর তাকবীর বলতে হবে। তাঁর যুক্তি হলো- হাত উঠানোর দ্বারা গায়রুল্লাহকে অস্বীকার করা বুঝায় আর তাকবীর ও হাত উঠানোর মধ্যে এর স্বীকৃতি রয়েছে। যেহেতু নীতি অনুযায়ী نفى তথা অস্বীকৃতি اثبات তথা স্বীকৃতির উপর প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তাই তাকবীরের পূর্বে হাত উঠানো প্রয়োজন। যেমন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র মধ্যে نفى তথা লা-ইলাহা اثبات তথা ইল্লাল্লাহু’র উপর অগ্রগামী হয়েছে। ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) এটা সঠিক বলেছেন অনেক ওলামা ও মাশায়েখ এ মত গ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের মতের সমর্থনে আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফে হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র বর্ণিত মারফু হাদিস পেশ করেছেন। উক্ত হাদিসে বর্ণিত আছে, كان يرفع يديه حذوء منكبيه ثم يكبر “ রাসূল (ﷺ)  কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন অতঃপর তাকবীর বলতেন”,  ➥ ইমাম নাসাঈ (رحمة الله), (৩০৩ হিঃ) নাসাঈ শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২২১, হাদীস নং-৬৪৪, বৈরুত)

এখানে ثم শব্দ দ্বারা সামান্য বিলম্ব করা বুঝায়। আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিসেও ثم শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লামা ইবনে হুম্মাম (رحمة الله) তৃতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। একদল ওলামায়ে কিরাম তা সমর্থন করেছেন। তাঁদের দলীল বায়হাকী শরীফে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত মারফু হাদিস اِذَا اِفْتَتَحَ الصَّلَوةَ كَبَّرَ ثُمَّ رَفَعَ “ রাসূল (ﷺ)  যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন অতঃপর হাত উঠাতেন।” এছাড়া হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিসে আছে,  فَكَبَّرَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ “রাসূল (ﷺ)  প্রথমে তাকবীর বলতেন অতঃপর হাত উঠাতেন।”

সমাধান: উপরোক্ত হাদিস সমূহের মধ্যে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, রাসূল (ﷺ)  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আমল করেছেন। সুতরাং এর মধ্যে যে কোন একটি আমল করা বাঞ্ছনীয়।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সালাম। অর্থাৎ নামায শেষে কয়বার সালাম ফিরাবে। এ ব্যাপারে ইমাম মালিক (رحمة الله) ব্যতীত সকল ওলামায়ে কিরাম একমত যে, দু’বার সালাম ফিরাতে হবে। প্রায় পনেরজন সাহাবী সহীহ ও নির্ভুলভাবে রাসূল (ﷺ)  থেকে এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর উপর রাসূল (ﷺ)  সর্বদা আমল করতেন এবং সাহাবা ও তাবেঈগণও এ আমল করতেন।

96 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، أَنَّهُ قَالَ فِيْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ : وَأَعْرَابِيٌّ لَـمْ يُصَلِّ مَعَ النَّبِيِّ  صَلَاةً قَبْلَهَا قَطُّ، أَهُوَ أَعْلَمُ مِنْ عَبْدِ اللهِ وَأَصْحَابِهِ، حَفِظَ وَلَـمْ يَحْفَظُوْا، يَعْنِيْ: رَفْعَ الْيَدَيْنِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، أَنَّهُ ذَكَرَ حَدِيْثَ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، فَقَالَ: أَعْرَابِيٌّ صَلَّىٰ مَعَ النَّبِيِّ  صَلَاةً قَبْلَهَا، أهُوَ أَعْلَمُ مِنْ عَبْدِ اللهِ.  وَفِيْ رِوَايَةٍ: ذُكِرَ عِنْدَهُ حَدِيْثُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ: أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ  رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ السُّجُوْدِ، فَقَالَ: هُوَ أَعْرَابِيٌّ لَا يَعْرِفُ شَرَائِعَ الْإِسْلَامِ، لَـمْ يُصَلِّ مَعَ النَّبِيِّ  إِلَّا صَلَاةً وَاحِدَةً.  وَقَدْ حَدَّثَنِيْ مَنْ لَا أُحْصِيْ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، أَنَّهُ رَفَعَ يَدَيْهِ فِيْ بَدْءِ الصَّلَاةِ فَقَطْ، وَحَكَاهُ عَنِ النَّبِيِّ ، وَعَبْدُ اللهِ عَالِـمٌ بِشَرَائِعِ الْإِسْلَامِ وَحُدُوْدِهِ، مُتَفَقِّدٌ لِأَحْوَالِ النَّبِيِّ ، مُلَازِمٌ لَهُ فِيْ إِقَامَتِهِ وَفِيْ أَسْفَارِهِ، وَقَدْ صَلَّىٰ مَعَ النَّبِيِّ  مَالَا يُحْصَىٰ.

৯৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه)’র সমালোচনা করে বলেন- তিনি একজন গ্রামের লোক ছিলেন। তিনি এর পূর্বে কখনো রাসূল (ﷺ) ’র সাথে নামায আদায় করেন নি। তিনি কি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এবং তাঁর সাথীদের থেকে অধিক জ্ঞাত ছিলেন? তিনি কি (হাত উঠানো সম্পর্কে) মুখস্থ করে নিয়েছিলেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র সাথীগণ তা মুখস্থ করতে পারেন নি?

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله) হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه)’র হাদিস বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেন, তিনি একজন গ্রাম্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এ নামাযের আগে নবীর সাথে আর কোন নামায আদায় করেন নি। তিনি কি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বেশী জ্ঞান রাখেন?
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ইব্রাহীম নখঈ (رضي الله عنه)’র সামনে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه)’র হাদিস বর্ণনা করা হলো যে, তিনি রাসূল (ﷺ)  কে রুকু ও সিজদার সময় হাত উঠাতে দেখেছেন। তখন তিনি (ইব্রাহীম) বলেন, হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (رضي الله عنه) একজন গ্রাম্য লোক। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের মত) ইসলামের ফকীহ্ নন। তিনি কেবল একবার নবী (ﷺ)’রর সাথে নামায আদায় করেছিলেন। আমার নিকট অসংখ্য বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন এবং তা নবী   থেকে রেওয়ায়েতে করেছেন। হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) শরীয়ত ও ইসলামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। রাসূল (ﷺ) ’র সাথে সফরে ও বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে সাথে সাথে থাকতেন। তিনি রাসূল (ﷺ) ’র সাথে অসংখ্যবার নামায আদায় করেছেন।

ব্যাখ্যা: রুকু-সিজদার সময় হাত উঠানো একটি বিতর্কিত মাসয়ালা। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন। প্রত্যেক দল স্বীয় মতের স্বপক্ষে শক্তিশালী দলীল পেশ করে অপর দলের দুর্বলতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।

ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, তাকবীরে তাহরীমায় হাত উঠানো মুস্তাহাব হওয়ার উপর সকল উম্মত একমত। তবে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্যান্য স্থানে হাত উঠানো নিয়ে ওলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমদ ও অধিকাংশ ফকীহ সাহাবীগণের মতে রুকু‘র আগে ও পরে হাত উঠানো মুস্তাহাব। ইমাম মালিক থেকেও অনুরূপ মত পাওয়া যায়।
ইমাম আবু হানিফা, কূফা’র ফকীহগণ এবং ইমাম মালিক (رحمة الله)’র প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া হাত উঠানো মুস্তাহাব নয়।  ➥ ইয়াহিয়া ইবনে শরফ নববী (র.) (৬৭৬ হিঃ) শরহে মুসলিম, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠাঃ  ১৬৮)

 -------------------
হাত না উঠানোর উপর হানাফীগণের দলীল:-

(১) ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
عن علقمة قال قال عبد الله بن مسعود رضى الله عنه الا اصلى بكم صلوة رسول الله  فصلى فلم يرفع يديه الا فى اول مرّة قال ابو عيسى حديث ابن مسعود حديث حسن وبه لقول غير واحد من اهل العلم من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم والتابعين -

“হযরত আলকামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূল (ﷺ) ’র ন্যায় নামায পড়াবো না? অতঃপর তিনি নামায পড়ালেন। এতে শুধু প্রথমবার হাত উঠালেন। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন, ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র হাদিস হাসান এবং রাসূল (ﷺ) ’র অসংখ্যা সাহাবী ও তাবেয়ীদের মতও অনুরূপ।”  ➥ ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) (২৭৯ হিঃ) জামে তিরমিযী, পৃষ্ঠাঃ  ৬৪-৬৫)

উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তাহাভী, ইমাম ইবনে আবি শায়বা ও ইমাম আব্দুর রাযযাকও রেওয়ায়েত করেছেন।

(২) ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
عن البراء ان رسول الله كان اذا افتتح الصلوة رفع يديه الى قريب من اذنيه ثم لا يعود
“হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ)  যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন কানের নিকট পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না। ➥ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) আবু দাউদ শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১০৯, লাহোর)।

উক্ত হাদিসখানা ইমাম তাহাভী। দারে কুতনী এবং ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) বর্ণনা করেন।

(৩) ইমাম তাহাভী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-عن الاسود قال رأيت عمر بن الخطاب رضى الله عنه يرفع يديه فى اوّل مرة ثم لايعود ورائت ابراهيم والشعبى يفعلان ذالك- “হযরত আসওয়াদ (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে দেখেছি যে, তিনি শুধু প্রথমবার হাত উত্তোলন করতেন। এরপর আর করতেন না।” হযরত ইব্রাহীম ও শা’বী (رحمة الله) ও অনুরূপ করতেন।➥ ইমাম তাহাভী (رحمة الله) (৩২১ হিঃ) শরহে মাআনিউল আসার, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৩, পাকিস্তান)

(৪) ইমাম দারেকুতুনী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
-عن علقمة عن عبد الله قال صليت مع النبى صلى الله عليه وسلم مع ابى بكر ومع عمر رضى الله عنهما فلم يرفعوا ايديهم الا عند التكبير الاولى فى افتتاح الصلوة
- “হযরত আলকামা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)  হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে নামায পড়েছি। এরা সবাই নামাযের প্রারম্ভে কেবল একবার প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন।” 
➥ ইমাম দারেকুতুনী (২৮৫ হিঃ) সুনানে দারেকুতুনী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৯৫, মুলতান)

(৫) ইমাম হুমাইদী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
-عن سالم عن عبد الله بن عمر قال رائت رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا افتتح الصلوة رفع يديه خذ ومنكبيه واذا اراد ان يركع وبعد ما يرفع راسه من الركوع فلا يرفع ولابين السجدتين
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  নামায আরম্ভ করার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। রুকুর আগে ও পরে আর হাত উঠাতেন না এবং দুই সিজদার মধ্যখানেও হাত উঠাতেন না।” ➥ ইমাম হুমাইদী (رحمة الله) (২১৯ হিঃ) আল মুসনাদ, খন্ড ২য়, পৃষ্ঠাঃ ২৭৭, বৈরুত)

(৬) ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
-عن عاصم بن كليب عن ابيه ان عليا كان يرفع يديه اذا افتتح الصلوة ثم لايعود“
"হযরত আসিম ইবনে কুলাইব স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী (رضي الله عنه) নামাযের শুরুতেই হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না।”  ➥ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) (২৩৫ হিঃ), আল মুসান্নিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৩৬, করাচী)

(৭)  عن الشعبى انه كان يرفع يديه فى اول التكبىر ثم لايرفعهما “ইমাম শা’বী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনিও শুধু প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর উঠাতেন না।” 
➥ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) (২৩৫ হিঃ), আল মুসান্নিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৩৬, করাচী)

(৮) عن ابراهيم انه كان يقول اذا كبرت فى فاتحة الصلوة فارفع يديك ثم لاترفعهما فيما بقى “ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله) বলেন, যখন তুমি নামাযের শুরুতে তাকবীর বলবে তখন হাত উঠাবে তবে বাকী নামাযে হাত উঠাবে না।”
➥ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) (২৩৫ হিঃ), আল মুসান্নিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৩৬, করাচী)

(৯) عن مجاهد قال ما رائت ابن عمر يرفع يديه الا فى اوّل يفتح “হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)কে শুধু প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতে দেখেছি।” ➥ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) (২৩৫ হিঃ), আল মুসান্নিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৩৬, করাচী)

(১০) عن جابر عن الاسود وعلقمة انهما كانا يرفعان ايديهما اذا افتتحا ثم لايعودان
“হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হযরত আসওয়াদ ও আলকামা (رحمة الله) কেবল প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন। এরপর আর উঠাতেন না।”
(১১) عن الاسود قال صليت مع عمر فلم يرفع يديه فى شيئ من صلوته الاحين افتتح الصلوة “ হযরত আসওয়াদ (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে নামায পড়েছি, তিনি নামাযের প্রারম্ভে ছাড়া হাত উঠান নি।” 
➥ ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) (২৩৫ হিঃ), আল মুসান্নিফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৩৬, করাচী)

(১২) ইমাম আবু ইউসূফ (رحمة الله) রেওয়ায়েত করেন-حدثنا ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم انه قال ارفع يديك فى التكبيرة الاولى فى افتتاح الصلوة ولاترفع يديك فيما سواها-
“ হযরত ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله) বলেছেন, নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমায় হাত উঠাও, এ ছাড়া আর কোন স্থানে হাত উঠাবে না।” ➥ ইমাম আবু ইউসূফ (رحمة الله) (১৮২ হিঃ), কিতাবুল আসার, পৃষ্ঠাঃ ২০-২১)

(১৩) عن ابن عباس ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لاترفع الايدى الا فى سبع مواطن حين يفتتح الصلوة وحين يدخل المسجد الخ “হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন, শুধু সাতটি স্থানে হাত উঠানো যাবে। তম্মধ্যে প্রথমটি হল নামাযের প্রারম্ভে।”  ➥ ইমাম আবু বকর হায়সামী (رحمة الله) (৮০৭ হিঃ), মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খন্ড ৩য়, পৃষ্ঠাঃ ২৩৮)

সমাধান:- উল্লেখ্য যে, রুকু’র আগে ও পরে হাত উঠানোর পক্ষে ও বিপক্ষে যথেষ্ট বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে। তবে যখন দুই হাদিসের মধ্যে দ্বন্ধ হয় তখন উভয় হাদিসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা একান্ত জরুরী। সমন্বয়টি হলো এভাবে যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিশেষ কারণে হাত উঠানোর বিধান ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হয়তো সেটিকে রহিত করা হয়েছে। যেমন প্রথমে নামাযে কথা বলা বৈধ ছিল। পরে তা রহিত হয়ে গেল।
+++++++++
কিতাবঃ শরহে মুসনাদে ইমাম আ‘যম আবু হানিফা 
[ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর সংকলিত কিতাব মুসনাদে ইমামে আজমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ]
ব্যাখ্যাকারঃ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
আরবি প্রভাষকঃ
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন