আমরা যে জান্নাত লাভের প্রতীক্ষায় এবং জাহান্নামের ভয় পাই তাও নবীজি (ﷺ)‘র ওসিলায় মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। হাদিসে পাকে রয়েছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃষ্টি করতাম।’’
➤ ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১, পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, ইমাম তকিউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃষ্ঠা, জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ হাদিসঃ ২১, হাইসামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃষ্ঠা, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ২/১১৪ পৃষ্ঠা, ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭পৃ, আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা : ১/১৬৫ পৃষ্ঠা, যুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব : ১২/২২০ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া,১/২৯ পৃষ্ঠা,দারুল তা‘লিফ, কাহেরা, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০ পৃষ্ঠা, দারুল মা‘রিফ, বয়রুত লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী : ১/৪৪১ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار
-“একদা আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! (ﷺ) আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে সৃজন না হতো বেহেশত আর না দোযখ।’’
➤ দায়লামীঃ আল-মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/২২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৮০৩১, মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফূআ, ১/২৯৫ পৃষ্ঠা, হাদিস :৩৮৫ মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ৪/১৬০ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩২০২৫।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ১০৬-১২৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন।
+++++++++++
২
পঞ্চম অধ্যায় :
২. রাসূল (ﷺ) হযরত আদম (عليه السلام)‘র বহু আগেই সৃষ্টি, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সকল নবির শেষে
---------------------------
এ প্রসঙ্গে ‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) নিজেই ইরশাদ করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله تعالى عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ-
-‘‘আমি ছিলাম সৃষ্টিতে নবিগণের সর্বপ্রথম এবং প্রেরণে নবীগণের সর্বশেষ।’’
➤ ইমাম আদী : আল কামিল : ৩/৩৭৩ পৃষ্ঠা, দায়লামী : ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৩/২৮২ পৃ হাদিস : ৪৮৫০, দায়লামী : ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৪/৪৪১ পৃ : হাদিস : ৭১৯৫, আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১১৯ পৃ : হাদিস : ২০০৭, ইমাম বগভী : মা‘লিমুত তানজিল : ২/৬১১ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৬৮০, ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৬/৩৮২ পৃষ্ঠা,ও সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/২৮৯ পৃষ্ঠা, ১/৩১৮ পৃষ্ঠা, সুয়ূতি : খাসায়েসুল কুবরা : ১/৫ হাদিস : ১, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : দালায়েলুন নবুওয়াত : ১/৪২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩, আবি হাতেম : আত্ তাফসীর : ৯/৩১১৬ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৭৫৯৪, মুত্তাকি হিন্দী কানযুল উম্মাল : ১১/৪৫২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩২১২৫, তাবরানী, মুসনাদিস্-শামীন, ৪/৩৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ২৬৬২, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
এই হাদিসটি এক সূত্রে সহীহ, আরেকটি সূত্রে ‘হাসান’ পর্যায়ের।
قَالَ قَتَادَةُ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:كُنْتُ أَوَّلَ الْأَنْبِيَاءِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رحمة الله) হতে সহীহ সনদে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন : আমি সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক দিয়ে সবার শেষে।’’
➤ শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৬৬পৃ, ইবনে সা‘দ : আত্-তবকাতুল কোবরা : ১/১৪৯ পৃষ্ঠা, ইমাম বগভী : তাফসীরে মা’লিমুত তানযিল : ৪/৪৩৫পৃ, ইমাম তবারী : তাফসীরে তবারী : ১০/২৬২, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ, দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস : হাদিস : ৪৮৫০, আবু নুঈম ইস্পাহানী : দালায়েলুল নবুয়ত, হাদিস ৩, ইমাম আদি : আল-কামিল : ৩/৪৯ পৃ হাদিস : ৩৭২, ইমাম কাযি আয়াজ, শিফা, ১/১১৪ পৃষ্ঠা,ও ১/৪৬৬ পৃষ্ঠা, তাবরানী : মুসনাদিস্-সামীন : ৪/২৬৬২ পৃষ্ঠা।
ইমাম সুয়ূতী সহ আরও অনেকে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।’’
➤ ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ২/২৪৮ পৃষ্ঠা, হা/৬৪২২-২৩এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৪৮-২৫১ পৃষ্ঠা,য় দেখুন।
ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) {ওফাত. ২০৭হি.}একটি হাদিস সংকলন করেন-
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
➤ ইমাম ইবনে সা‘দ, আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃষ্ঠা,দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, শিফা শরীফ, ১/১১৪ পৃষ্ঠা, কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃষ্ঠা,।
আহলে হাদিসদের ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) {ওফাত. ৭৭৪হি.}এই হাদিসটি সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’
➤ ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃষ্ঠা,
তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে; যা এই সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল।
তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই এই দিকেই ইশরা করে হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র কাছে জানতে চাওয়া হলো যে, আপনি কখন নবুয়ত লাভ করেছেন? তিনি বলেন, আদম (عليه السلام) যখন রূহ ও দেহের মাঝামাঝি ছিলেন।’’ ➤তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/৫৮৫ পৃষ্ঠা, কিতাবুল মানাকিব, হাদিসঃ ৩৬০৯, তিনি বলেন হাদিসটি ‘হাসান’। আহলে হাদিস আলবানী সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
তাই যারা বলছেন তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেছিলেন তারা যে গোমরাহ তা স্পষ্ট প্রমাণিত হল।
+++++++++++
আকায়েদে আহলে সুন্নাহ (১ম খন্ড)
(ফিতনা ফাসাদের মোকাবেলায় আমাদের সঠিক আক্বিদা)
গ্রন্থনা ও সংকলনে:
মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রকাশক, সাকলাইন প্রকাশক, বাংলাদেশ।
সম্পাদনায়:
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন