রাসূল (ﷺ)‘র পিতামাতা মু‘মিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন


আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা হলো মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সম্মানিত পিতা-মাতা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেননি; তারা বনী হানিফের উপরে ছিলেন। তারপর আবার মহান রব তাদেরকে নবীজির প্রতি ঈমান আনার সুযোগ দিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তার ‘নাসেখ ওয়াল মানছুখ’ গ্রন্থে ইবনে আসাকির তার তারীখে দামেস্কে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন বিদায় হজ্জের সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেদনার্ত ছিলেন। এতসময় তিনি আনন্দচিত্তে আয়েশা (رضي الله عنه)‘র নিকট আগমন করেন। তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-

فَقَالَ: ذَهَبْتُ لِقَبْرِ أُمِّي فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُحْيِيَهَا فَأَحْيَاهَا فَآمَنَتْ بِي وَرَدَّهَا اللَّهُ

-‘‘অতঃপর আমি আমার মা আমেনা (رضي الله عنه)‘র নিকট গমন করি এবং আল্লাহর কাছে দু‘আ করি তাঁকে জীবিত করতে। তখন আল্লাহ তাঁকে জীবিত করেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনয়ন করেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁকে কবরের জগতে ফিরিয়ে নেন। কোনো কোনো বর্ণনায় পিতা-মাতা উভয়ের কথা বলা হয়েছে।’’ 

➤ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ-১৪২৪হিজরি। ইমাম কুরতুবী, তাযকিরাহ, ১৫ পৃষ্ঠা, ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/১০৩ পৃষ্ঠা, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/১২২ পৃষ্ঠা, দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/২৩০ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ,১/১৫৫ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/৩১৫ পৃষ্ঠা,


ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) এ সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন। কিন্তু আমরা বলি এ হাদিসটি ইমাম তবারী (رحمة الله) এ হাদিসটির আরেকটি সনদ বর্ণনা করেছেন যার কারনে সনদটি ‘হাসান’।

➤ ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/১০৩ পৃষ্ঠা,



বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সকলের মান্যবড় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী লিখেন-

وَلِهَذَا عَمَّمَ الحافظ ابن حجر فِي قَوْلِهِ: الظَّنُّ بِآلِ بَيْتِهِ كُلِّهِمْ أَنْ يُطِيعُوا عِنْدَ الِامْتِحَانِ.

-‘‘নিশ্চয় রাসূলে পাক  এর পিতা মাতা সম্বন্ধে যে ধারণা করা হয় যে, তারা প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন পরীক্ষায় আনুগত্যশীল হবেন।’’

➤ ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১ পৃষ্ঠা,



ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর অভিমত উল্লেখ করেন-

وَلَعَلَّهُ يَصِحُّ مَا جَاءَ أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ اللَّهَ سُبْحَانَهُ، فَأَحْيَا لَهُ أَبَوَيْهِ، فَآمَنَا بِهِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ هَذَا، وَلَا يُعْجِزُ اللَّهَ سُبْحَانَهُ شَيْءٌ

-‘‘সম্ভবত এজন্য ইহা সঠিক যে রাসূল  আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তারা নবীজির প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। কারণ আল্লাহর নিকট কোন কিছুই অসম্ভব নয়।’’

➤ ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫২ পৃষ্ঠা,


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) প্রাথমিক জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা জাহান্নামী ও কাফির হওয়ার উপরে অভিমত পেশ করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতির কিতাব অধ্যায়নের পরে তার ভুল ভেঙ্গে যায় এবং ইতোপূর্বের আক্বিদা ঠিক করে নেন। যেমন তার শেষের দিকের গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-

وأما اسلام أبويه ففيه أقوال والأصح اسلامهما على ما اتفاق عليه الأجلة من الأئمة كما بينه السيوطي في رسائله الثلاث المؤلفة

-‘‘রাসূল (ﷺ) এর পিতা-মাতার ইসলাম গ্রহনের ব্যাপারে একাধিক মতামত রয়েছে, তবে বিশুদ্ধ অভিমত হল, রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা উভয়ই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন; এমনটি উম্মতের মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগণ উল্লেখ করেছেন যেমনটি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (ﷺ) তার তিনটি রিসালায় উল্লেখ করেছেন।’’

➤ মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৬০৫ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


এ বিষয় সম্পর্কে  বিশদ আকারে জানতে চাইলে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ এর ২য় খন্ডের শুরুতে দেখুন। ইনশাআল্লাহ ! আপনাদের বুঝে আসবে।

++++++++++

পঞ্চম অধ্যায়:

সমস্ত মানুষ মাটির তৈরী নয়
----------------

অনেক সাধারণ মানুষের ধারণা তারা মাটির তৈরী। অথচ এটি কোরআন বিরোধী কথা। কোরআন সুন্নাহে গবেষণা করে সমস্ত মানুষ পাঁচভাগে সৃষ্টি প্রমাণ পাওয়া যায়।

ক. আদি পিতা আদম (عليه السلام) কে সরাসরি মাটি দিয়ে। ➤সুরা সোয়াদ, আয়াত, ৭১


খ. মা হাওয়া (عليه السلام) কে তাঁর স্বামী তথা আদম (عليه السلام)-এর পাজর থেকে। ➤ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনারা আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ২৪৬-২৪৭  পৃষ্ঠা, দেখুন।


সূরা নিসায় আল্লাহ ইঙ্গিত করেছেন-  وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا -‘‘তাঁর থেকে তার সঙ্গীনীকে বানানো হয়েছে। (সুরা নিসা, আয়াত, ১) তার কি থাকে বানানো হয়েছে তা কোরআনে স্পষ্ট নেই। তাই সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، -‘‘নিশ্চয় সকল স্ত্রীদেরকে {আদম (عليه السلام)-এর স্ত্রী হযরত হাওয়া (عليه السلام)ও অন্তর্ভুক্ত} তাঁর স্বামীর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’

➤বুখারী, আস-সহিহ, ৪/১৩৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং  ৩৩৩১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ২/১০৯১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং  ১৪৬৮, সুনানে দারেমী, ৩/১৪২৫ পৃষ্ঠা, হাদিস নং  ২২৬৭, হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/১৯২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৭৩৩৩, ও ৭৩৩৪,  ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, হাদিস নং  ৪১৭০


গ. ঈসা (عليه السلام) কে শুধু মাত্র জিবরাঈল (عليه السلام)‘র ফুঁ থেকে। ➤সূরা মারিয়াম, আয়াত, ১৭-১৯


ঘ. আমরা সাধারণ মানুষদেরকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে।

এ বিষয়ে কোরআনের মোট ১১টি স্থানে মহান রব ইরশাদ করেছেন। তাকে কেউ হেয় করলে কাফির হয়ে যাবেন। যেমন- {দেখুন- সূরা ফোরকান, আয়াত, ৫৪, সূরা ত্বারেক, ৫, সূরা দাহর/ইনসান, ৩৭-৩৯, সূরা মুরছালাত, ২০-২১,  সূরা সাজদা, আয়াত, ৭-৮,  সূরা ইয়াছিন, ৭৭, সূরা নাজাম, ৪৫-৪৬, সূরা আবাসা, ১৮-১৯, সূরা আলাক্ব, ২, সূরা নাহল, ৪, সূরা কিয়ামা, আয়াত, ৩৬-৩৮, এ মোট ১১ স্থানে কোরআনে রয়েছে মানুষ নুতফার বা মা-বাবার বীর্যের তৈরী। আর আমাদের দেশের কাটমোল্লারা কোরআনের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিচ্ছেন।}

ঙ. রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর নূরের তাজাল্লী হতে।

➤সুরা মায়িদা, ১৫, সূরা নূর, ৩৫, সূরা তাওবা, আয়াত,

++++++++++++

পঞ্চম অধ্যায়:

৪. রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয়ঃ
----------------------

ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (رحمة الله) বলেন-

اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله-

-‘‘জেনে রাখুন! রাসূল (ﷺ)‘র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান হলো- এভাবে ঈমান আনা যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর শরীর মোবারককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর পূর্বে পরে কোন মানুষকে তাঁর মতন করে সৃষ্টি করেননি।’’  ➤কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ২/৫ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর।


তাই সকলের জানা উচিত মানব জাতির অনুসরণ ও অনুকরণের সুবিধার্থে আল্লাহ তাঁকে বাহ্যিকভাবে মানবীয় আকৃতি ও মানবীয় কতেক গুণাবলি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে রয়েছে যে, হুযুরের অনুরূপ হওয়া অসম্ভব। হুযুরের বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে কাউকে হুযুরের গুণের মতো বললে, সে কাফির। (আল-মুতামেদ, ১৩৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, ১/১৯পৃ.)।

+++++++++++
আকায়েদে আহলে সুন্নাহ (১ম খন্ড)
(ফিতনা ফাসাদের মোকাবেলায় আমাদের সঠিক আক্বিদা)

গ্রন্থনা ও সংকলনে:
মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রকাশক, সাকলাইন প্রকাশক, বাংলাদেশ।

সম্পাদনায়:
মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন