নূরনবী ﷺ

সতেরতম অধ্যায়ঃ আবির্ভাবঃ
প্রসঙ্গঃ     আত্মপ্রকাশের     পূর্বাভাস-    নির্জন     সাধনা    ও গিরিগুহায় চিল্লাকাশী
=========
আল্লাহর   প্রিয়    হাবীব    [ﷺ]-এঁর   বয়স   যখন    পঁয়ত্রিশ অতিক্রম  করলো-  তখন  থেকেই তিনি  নির্জনতা বেশী পছন্দ  করতেন  এবং  কয়েক  দিনের  খাদ্য  সাথে  নিয়ে  মক্কার ৩ মাইল পূর্বে হেরা পর্বতের চূড়ায় চলে  যেতেন। তিনি  পর্বতের   সর্বোচ্চ  চূড়া   গীরিগুহায়    একাকী   বসে বসে   ইবাদত   বন্দেগী   ও    ধ্যান   করতেন।    উক্ত    গুহায় নির্জন        ইবাদতের       কারণ      ছিল      এই-সেখান       থেকে খানায়ে    কা’বা     দৃষ্টিগোচর     হতো।    উপরে     আকাশের নিলীমা এবং   সম্মুখে আল্লাহর  ঘর, আর নির্জন  নিথর প্রকৃতি - সব মিলিয়ে তিনি ধ্যানের রাজ্যে ডুবে যেতেন। এটা ছিল নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র চিল্লা।

[বর্তমানে    এক      ধরণের    চিল্লাতে      বের    হয়     তাবলীগ  জামাআত। তারা মসজিদে থাকে, বারান্দায় রান্না করে ও  খায়   এবং  মানুষের   ঘরে     ঘরে   গাশ্ত  করে।    এটাকে তারা নাম দিয়েছে চিল্লা।  কোন   নবী, কোন   সাহাবী  বা কোন অলী-গাউস এ ধরণের চিল্লা  করেন নি।  সুতরাং  এ নাম গ্রহণ করে তারা মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তাদের চিল্লার কোন ভিত্তি নেই।]

নবী   করীম    [ﷺ]-এঁর   খাদ্য   ফুরিয়ে   গেলে    তিনি   গৃহে প্রত্যাবর্তন  করে  খাদ্য নিয়ে   পুনরায় চলে যেতেন  হেরা গুহায়।      একাজে    সহায়তা     করতেন    পতিপ্রাণা     বিবি হযরত    খদিজা      (رضي    الله      عنها)।     যতই    দিন    যেতে লাগলো,  হুযুর  আকরাম  [ﷺ]-এঁর  ধ্যানের  গভীরতাও  ততই      বাড়তে     লাগলো।     পূর্ণিমার     চাঁদের     আকর্ষণে  সাগরের   পানি    যেভাবে    উথলে   উঠে,   আল্লাহ   রাব্বুল ’আলামীনের  প্রেমাকর্ষণে   নবী    করীম   [ﷺ]-এঁর  হৃদয় সাগরেও   তেমনিভাবে  প্রেমের  জোয়ার  উথলে    উঠতে থাকে। প্রেমিক আর প্রেমাস্পদ ছাড়া এ আকর্ষণ অন্য কেউ   অনুভব  করতে  পারবেনা।  এ  যেন   মহান  দায়িত্ব গ্রহণের    পূর্বপ্রস্তুতি  পর্ব।  ৪০  বৎসর  পূর্ণ  হওয়া    মাত্রই ১২ই     রবিউল   আউয়াল   থেকে    ওহীর   সাতটি    স্তরের  প্রথম স্তর  অবতীর্ণ হওয়া  শুরু  হলো- অর্থাৎ “সত্যস্বপ্ন দর্শন।” এভাবে ছয়মাস কেটে গেল। এই ৬ মাসকে নবী করীম    [ﷺ]    নবুয়তের    ৪৬      ভাগের    এক      ভাগ     বলে হাদীসে  উল্লেখ   করেছেন- অর্থাৎ ৪৬  ভাগের একভাগ  ছিল   ৬   মাস   “সত্যস্বপ্ন   দর্শন”   (মিরকাত)।   ৭ম    মাসে  অর্থাৎ    রমযানের    শবে    ক্বদর    সোমবার    রাত্রে    প্রথম   প্রত্যক্ষ   ওহী    (কোরআন)    নাযিল   শুরু   হয়।   বোখারী  শরীফের  প্রারম্ভে  হযরত  আয়েশা  সিদ্দিকা  (رضي  الله  عنها)  থেকে   বর্ণিত  হাদীসে   দেখা  যায়-  ওহী   নাযিলের সূচনা  হয়  সত্যস্বপ্ন  দ্বারা।   নবী  করীম   [ﷺ]     যে   কোন স্বপ্ন    দেখতেন,   দিনের   বেলার    সূর্যালোকের    ন্যায়   তা  বাস্তবে   ঘটে   যেত।   এটা   হলো   ওহী   নাযিলের   সাতটি  প্রক্রিয়ার         মধ্যে         অন্যতম        একটি        প্রক্রিয়া।        এটা জিব্রাইলের মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর পক্ষ হতে হতো।   নবীগণের   স্বপ্নও   ওহী।   এজন্য    তাঁদের    স্বপ্নের  মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশ শরীয়তের অংশ হতো। অন্যকোন অলী  বা  গাউছের   স্বপ্ন   সত্য  হলেও  তা    শরীয়ত  বলে  গণ্য হবে না এবং নবুয়তের অংশও হবেনা।

সুতরাং   স্বপ্নেপ্রাপ্ত   তাবলীগের   ৬   অছুল   বা   নিয়মকে  শরীয়ত      বলে      প্রচার      করা      এবং      স্বপ্নের      এই      ছয়  অছুলকে     ‘পূর্ণাঙ্গ    ইসলামের    রূপ’    বলে     প্রচার    করা হারাম।   কিন্তু   দুঃজনক   হলেও   সত্য     যে,   ছয়    অছুলী তাবলীগ  জামাআত   তাদের   ছয়  অছুলকে  ইসলামের  পূর্ণরূপ     বলে     “দাওয়াতে      তাবলীগ”      নামক      পুস্তকে উল্লেখ করেছে। মূলতঃ তাবলীগ জামাতের ছয় অছুল স্বপ্নেপ্রাপ্ত।      মৌলভী      ইলিয়াছ      (প্রতিষ্ঠাতা      তাবলীগ  জামাআত)   নিজেই  বলেছেন  যে,    “তাবলীগের  পূর্ণাঙ্গ তরিকাটি     আমার     স্বপ্নেপ্রাপ্ত।”     (মলফুযাত       ৫০নং)। স্বপ্নে   প্রাপ্ত জিনিসকে দ্বীন  নাম দিয়ে প্রচার করা এবং মসজিদ ব্যবহার করা অবৈধ।

পবিত্র    কোরআনে   আল্লাহ্তায়ালা   তাঁর    তরফ   থেকে অবতীর্ণ হুকুম  আহকামের  তাবলীগ  করার  জন্য  নবী  করীম [ﷺ] কে নির্দেশ করেছেন,
[القرآن الكريم - سورة المائدة - الآية 67] يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
অর্থঃ-  ”হে   রসূল,  পৌছে দিন  আপনার  প্রতিপালকের পক্ষ  থেকে  আপনার   প্রতি  যা   অবতীর্ণ  হয়েছে”  (সূরা মায়েদাঃ   ৬৭)।    সুতরাং    তাবলীগ    করতে   হলে   ওহীর  মাধ্যমে  প্রাপ্ত  ইসলামের  ৫   অছুলের     তাবলীগ  করতে হবে   -    দিল্লীর   স্বপ্নেপ্রাপ্ত   তাবলীগ   নয়।   কেননা,   এটা  আসমান        থেকে        অবতীর্ণ       নয়।       কারও       ব্যক্তিগত নীতিমালা  বা  অছুলকে  তাবলীগ  নাম  দেওয়া  হারাম।  নবী        করীম       [ﷺ]     ও     সাহাবাগণের     তাবলীগ      ছিল কাফেরদের নিকট ওহীপ্রাপ্ত দ্বীনের দাওয়াত প্রদান। এ ধরণের    তাবলীগের  হুকুমই  কোরআনে  দেয়া  হয়েছে।  দিল্লীর  তাবলীগ  জামাআত মুসলমানকে  কাফের মনে করেই   তাদের    নিকট   দ্বীনের     দাওয়াত     দেয়।    দ্বীনের দাওয়াত     হয়   কাফেরের   কাছে।    তাবলীগ    জামাতের ৪২নং     মলফুয    মোতাবেক    “তাবলীগ    জামাআত     ও  তাদের       সাহায্যকারী        ব্যতিত        অন্য       কোন         তৃতীয় মুসলমান   নেই”।    তারা    সুন্নী      মুসলমানকে   অমুসলিম জ্ঞান করে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়। (প্রমাণ  হলো  ৪২  নং মলফুজ।)

মূলতঃ   চিল্লা    হচ্ছে   তরিকতপন্থীদের    নির্জন   সাধনার নাম।  হযরত   বড়পীর   আব্দুল  কাদের   জিলানী   (رضي الله     عنه)     চিল্লা     করেছেন    নির্জন    জঙ্গলে    ও      বিরান মরুভূমিতে।   হযরত    খাজা   গরীব    নওয়ায   (رحمة   الله عليه)   চিল্লা দিয়েছিলেন, হযরত  দাতাগঞ্জ বখশ (رحمة الله      عليه)-এঁর    মাযারে    একাধারে    ৪০     দিন।     হযরত  নিজামুদ্দীন         আউলিয়া           (رحمة        الله        عليه)         চিল্লা করেছিলেন যমুনা  নদীর তীরে- দিল্লীর অদূরে।  হযরত মুছা (عليه  السلام) চিল্লা  করেছিলেন   ৪০ দিনের  জন্যে  তুর    পর্বতে    নির্জনে।   আমাদের   প্রিয়   নবী   [ﷺ]   চিল্লা করেছেন  গারে হেরায়।  লোকালয় থেকে দূরে   একাকী নির্জন   সাধনাকেই  তরিকতের  ভাষায়   চিল্লা  বলা  হয়। আজকাল   চিল্লা  দিচ্ছে  দলবেধে  মসজিদে    মসজিদে। এটা  চিল্লার   অবমাননা ও প্রতারণা  ছাড়া আর   কিছুই  নয়।   তাবলীগ   জামাআত   কর্তৃক   মসজিদে   মসজিদে  গাঠুরী বোঝা নিয়ে ঘুরা ফেরা করতে  চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেই নবী করীম [ﷺ] নিষেধ করেছেনঃ

“তোমরা    মসজিদে    হারাম     (মক্কা     শরীফ),    মসজিদে  নববী  (মদীনা শরীফ)  ও মসজিদে আক্বসা বা  বাইতুল মোকাদ্দাস (ফিলিস্তিন) এই তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন   মসজিদের  উদ্দেশ্যে   গাঠুরী  বোঝা  নিয়ে   সফর  করো   না।”     (বুখারী    হা/১১৮৯,   ১/১৫৮   পৃঃ,    (ইফাবা হা/১১১৬,   ২/৩২৭   পৃঃ);   মুসলিমঃ    ইফাবা    -     ৩২৫৬,  মিশকাত       হা/৬৯৩,      পৃঃ        ৬৮;       বঙ্গানুবাদ      মিশকাত হা/৬৪১, ২/২১৪ পৃঃ।)।

[সেই  ভবিষ্যৎবানী   ১৩৩৩  হিজরীতে  বাস্তবে   প্রমানিত হয়েছে।           ওহাবীরা          তাবলীগ          জামাতের         মাধ্যমে মসজিদগুলো    দখল   করে   এলাকায়    ওহাবী   আক্বিদা প্রতিষ্ঠিত করার গোপন স্কীম   হাতে  নিয়েছে।  এই স্কীম বাস্তবায়ন  করতে  প্রথমে ৬  অছুলের বয়ান করে। পরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে ওহাবী আক্বিদা শিক্ষা দেয়।]

 উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর "  নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন