নূরনবী ﷺ

পঞ্চদশ অধ্যায়:

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
-------------------
হযরত   বিবি  খাদিজা  (رضي  الله  عنها)   হুযুরের   নবুয়ত ঘোষণার  পূর্বে  ১৫   বৎসর  এবং    নবুয়ত  ঘোষণার  পর ১০  বৎসর হুযুর  [ﷺ]-এঁর ঘর-সংসার করেছেন।  তাঁর  অগাধ  সম্পদ  নবীজীর   চরণে সঁপে  দিয়েছিলেন।  নবী করীম  [ﷺ]  গরীব, মিছকিন, ইয়াতীম, কাঙ্গাল, বিধবা ও    সহায়-সম্বলহীন   জনগণের    পুনর্বাসনে    সব   সম্পদ দান      করে      দেন।       মক্কার       কুরাইশগণ      কর্তৃক         তিন বৎসরকাল   ‘বয়কট’    সময়ে   বিবি    খদিজা   (رضي   الله  عنها)    নবী     করীম    [ﷺ]-এঁর     সাথে     নির্বাসিত      জীবন যাপন  করেছিলেন এবং   ক্ষুধার  তাড়নায়  গাছের  ছাল বাকল   পর্যন্ত  খেয়েছিলেন।  একজন   ধনবতী  মহিলার এই স্বামীপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শ একমাত্র আইয়ূব (عليه   السلام)-এঁর   বিবি   ও    ইউসুফ    (عليه   السلام)-এঁর কন্যা      হযরত     রহিমার    সাথেই     তুলনীয়    হতে     পারে। (তাফসীরে সাভী, সূরা ইউসুফ)।

[বিবি     খাদিজা       (رضي     الله     عنها)-এঁর     স্বামীপ্রেম      ও  স্বামীভক্তি          আমাদের          নারীসমাজের         জন্য           এক চমৎকার অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় আদর্শ।]

নবী     করীম     [ﷺ]-এঁর     দাম্পত্য    জীবনের      প্রথম    ১৫ বৎসরের       বিস্তারিত     দৈনন্দিন      ঘটনাবলী      জানা      না গেলেও     মোটামুটিভাবে      নিম্নরূপ     ছিল।     ২৭      বৎসর বয়সে  হুযুর  আকরাম     [ﷺ]-এঁর   প্রথম    সন্তান  হযরত কাশেম    (رضي    الله    عنه)    জন্মগ্রহণ    করেন    এবং    দুই  বৎসর পর ইনতিকাল করেন। ৩০ বৎসর বয়সের সময় বিবি যয়নাব (رضي الله عنها) জন্মগ্রহণ করেন। এর পর পর অন্যান্য  সাহেবজাদা  ও সাহেবজাদীগণ  জন্মগ্রহণ করেন ৪০ বৎসর বয়সের মধ্যেই।

যখন   নবী     করীম     [ﷺ]-এঁর    বয়স   ৩২   বৎসর,   তখন আপন  চাচাত  ভাই  হযরত   আলী   (رضي  الله   عنه)-এঁর জন্ম   হয়।   জন্মের   পর  নবী  করীম   [ﷺ]  আপন    চাচা  আবু         তালেবের         নিকট        থেকে        হযরত         আলীকে লালন-পালনের    জন্য    নিজের    কাছে     নিয়ে     আসেন। বিবি  খাদিজা (رضي   الله عنها) আপন সন্তানবৎ হযরত আলীকে      লালন     পালন     করেন।      এটা     ছিল      চাচার  প্রতিপালনের    বিনিময়ে  প্রতিদানস্বরূপ।  হযরত  আলী (رضي الله عنه) শিশুকাল  থেকেই নবী করীম  [ﷺ]-এঁর বিশেষ যত্নে ও সান্নিধ্যে গড়ে উঠেন এবং পরবর্তীকালে বিবি  ফাতিমা   (رضي  الله  عنها)-এঁর  যোগ্য    স্বামী  হবার গৌরব     অর্জন     করেন।     আল্লাহ      তায়ালার    নির্দেশেই হযরত আলী  (رضي الله   عنه)-এঁর সাথে   বিবি   ফাতিমা (رضي الله عنها)-এঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।

বিবি    খাদিজা     (رضي    الله    عنها)-এঁর     ব্যবসার    দায়িত্ব গ্রহণকাল    থেকে    বিবাহোত্তর    ১৫    বৎরের    ঘটনাবলী  পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-
(১) নবী করীম  [ﷺ]  যৌবনের প্রারম্ভেই  'আল আমীন' খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন- যা ছিল দুর্লভ গৌরব।
(২)  হুযুর  আকরাম  [ﷺ] জীবিকা  অর্জনের জন্য মেষ  চড়ানো    ও    ব্যবসা    বাণিজ্যের    কাজ    করতেন।    হুযুর  আকরাম  [ﷺ] এরশাদ  করেন, “সকল   নবীগণই   নিজ হাতে     অর্জিত     হালাল     রুজী     দ্বারা     জীবিকা     নির্বাহ  করতেন।            আমানতদার              সত্যবাদী            ব্যবসায়ীগণ কিয়ামতের   দিনে   নবীগণ,   ছিদ্দিকগণ   ও  শহীদগণের সাথে থাকবেন।” (মিশকাত শরীফ)
(৩)   বিবি    খাদিজা   (رضي   الله   عنها)-এঁর    সম্পদ    লাভ করেও  নবী  করীম  [ﷺ]  মনি-কাঞ্চনে  বিভোর  ছিলেন  না।     সম্পদ       ছিল     তাঁর     আয়ত্বাধীন।     তিনি       কখনও সম্পদের অধীন বা ভোগ-বিলাসী ছিলেন না। এখানেই দুনিয়া ও আখেরাতের পার্থক্য নির্ধারিত হয়।
(৪)  অসহায়,    ইয়াতীম,    বিধবা  ও  গরীব-মিছকিনদের সেবা করা নবীজীবনের প্রথম উত্তম সমাজ সেবামূলক কাজ ছিল।
(৫) কেউ উপকার করলে তার বিনিময়ে প্রতিদান দেয়া ও স্বীকৃতি  প্রদান   করা নবীজীর  তরিক্বা। যেমনঃ তিনি করেছিলেন হযরত আলীর প্রতিপালনের  দায়িত্ব গ্রহণ  করে।
(৬) চরিত্র মাধুর্য বড় সম্পদ। চরিত্রবান লোক সকলের নিকটই প্রশংসার পাত্র।
(৭)     বিবাহবন্ধন     একটি       পবিত্র     কাজ     ও      সভ্যতার মূলভিত্তি।  একাজে  অভিভাবকগণের  সম্মতি  জরুরী।  বর্তমানকালের  যুবক-যুবতীগণ এ আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ    করতে     পারেন।      নতুবা    আদালতে    জনসমক্ষে  অপমানিত  হতে  হবে  এবং   পরবর্তী  দাম্পত্য  জীবনও  বিষময় হয়ে উঠবে।
(৮)    দাম্পত্য     জীবনের      উদ্দেশ্য    হলো     -     সন্তানাদির দায়দায়িত্ব গ্রহণ করা, শুধু ভোগ বিলাস নয়।
(৯)        বৈরাগী         জীবন         ইসলাম        সম্মত         নয়।          "লা রাহবানিয়াতা ফিল ইসলাম।"
(১০)          নবী          করীম           [ﷺ]-এঁর          নবুয়তপূর্ব          এবং  নবুয়ত-পরবর্তী সমগ্র জীবনই আমাদের জন্য আদর্শ।
যারা  শুধু    ২৩  বৎসরকে   মডেল   ধরে  ইসলামের  নামে সংগ্রাম করে, তারা ভ্রান্ত।
(১১)   শিশুকাল  হতেই   নবুয়তের   নিদর্শনসমূহ   প্রকাশ এবং বাণিজ্য কাফেলায়   ফেরেশতাদ্বয়ের  ছায়া প্রদান  নবুয়ত প্রকাশের পূর্বাভাস।


 উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর "  নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন